টাকা আয় করতে হলে আপনাকে দুটি উপায়ের যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। একটি হলো চাকরি, অপরটি হলো ব্যবসায়। বর্তমান যুগে যেহেতু শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বেশী তাই চাকরিতে টেকা কঠিন। তাই, অনেকেই ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। এভাবে অনেকে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন। 


আপনি যখন ব্যবসায় শুরু করবেন তখন হয়তো ব্যবসায়ে তেমন লাভ হবেনা। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি একসময় বড় হবে। তখন ব্যবসায় আরো সম্প্রসারণ করতে পারবেন। ব্যবসায়ে সফল হবার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রম। এখন অনেকেই আছেন যারা কয়েক লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ কোটি টাকার মালিক। 


কিন্তু ব্যবসায় শুরু করার আগে একটু ভেবেচিন্তে শুরু করতে হয়। কেননা, ব্যবসায়ে প্রচুর ঝুঁকি বিদ্যমান। ব্যবসায়ে যদি লাভ হয় সেটি আপনি ভোগ করবেন। আবার, ব্যবসায়ে ক্ষতি বা লোকসান হলে সেটিও আপনাকেই বহন করতে হবে। তাই, এমন ব্যবসায় বেছে নেওয়া উচিত যা লাভজনক।




আজকের পোস্টে এমন কয়েকটি লাভজনক ব্যবসায় সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।




১. ফটোকপির দোকান:-




ফটোকপির ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসায়। অবশ্য এটি যে আপনার জন্য লাভজনক হবে তার ১০০% গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না। কেননা, এটি অনেকাংশে নির্ভর করে সঠিক পরিকল্পনার উপর। দোকানের অবস্থানের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে দোকানটিতে কীরকম বিক্রয় হবে। তাই, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত লোকসমাগম বেশি হয় এমন জায়গায় ফটোকপির ব্যবসায় ভালো হয়। আর আপনি চাইলে ফটোকপির পাশাপাশি বিকাশ, নগদ, রকেট ও মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করতে পারেন। সাধারণত অনেক ফটোকপির দোকানে বিকাশ, নগদ, রকেট ও মোবাইল রিচার্জের সেবা বিক্রি করা হয়। তাই, আপনিও ট্রাই করতে পারেন।




২. মোবাইলের দোকান:-




বর্তমানে শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ প্রায় সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। মোবাইল দৈনন্দিন জীবণের অপরিহার্য একটি উপাদান। তাই, মোবাইল কেনার দোকানে বেশি ভিড় থাকাটাই স্বাভাবিক। মোবাইলের দোকানে স্যামসাং, অপো, ভিভো, ওয়ালটন, সিম্ফনি, নকিয়া সব ব্র‍্যান্ডের ফোন রাখতে হয়। কোনো কোনো স্মার্টফোনের দোকানে সেকেন্ড-হ্যান্ড মোবাইল ও আইফোন বিক্রি করা হয়। মোবাইল ফোনের দোকান দিতে গেলে কয়েক লাখ টাকার পুঁজি লাগে। তাই, মোবাইলের ব্যবসা শুরু করতে গেলে আপনাকে বড়সড় মূলধন নিয়ে ব্যবসায় শুরু করতে হবে। মোবাইল ফোনের দোকানে মোবাইল ছাড়াও ফোনের কভার, হেডফোন, চার্জার ইত্যাদি এক্সেসোরিজও বিক্রি করা হয়ে থাকে। সাধারণত, লোকসমাগম বেশি হয় এমন জায়গায় যেমন বাজার বা বাসস্ট্যান্ডের পাশে মোবাইলের ব্যবসা ভালো হয়।






৩. মুরগির দোকান:-




সঠিক পরিকল্পনায় ব্যবসায় শুরু করলে মুরগি ও ডিমের দোকানও অনেক লাভজনক ব্যবসায় হতে পারে আপনার জন্য। আপনার দোকান যদি বাজারে ঢুকতে সবার প্রথমে পড়ে তাহলে ক্রেতারা প্রথমে আপনার দোকানকেই বেছে নেবেন মুরগি কেনার জন্য। মুরগির দোকানে মুরগির পাশাপাশি মুরগির ডিমও বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে আমার এক বন্ধুর বাবার উদাহরণ দিয়ে আপনাদের বুঝিয়ে দিই। আমার এক বন্ধুর বাবার গ্রামের বাজারের মুখে দোকান ছিল। তিনি আগে শুধু চাল, কালো লাকড়ি এসব বিক্রি করতেন তার দোকানে। তখন তার দোকানে তেমন বিক্রি হত না। এসবের ব্যবসায়ে তার তেমন লাভও হতো না। এরপর তিনি শুরু করেন মুরগি ও ডিমের ব্যবসা। এখন তার দোকানে আগের চেয়ে বিক্রি অনেক বেড়েছে। যেহেতু, তার দোকান বাজারে ঢুকার সময় সবার আগে ছিল তাই ক্রেতারা অন্য দোকানে না গিয়ে সেখান থেকেই কিনে নিতেন।




৪. স্পোর্টস এক্সেসোরিজের দোকান:-




খেলাধুলা জীবনেরই একটি অংশ। আবার অনেকের কাছে খেলা নেশার মতো। তাই, প্রতিনিয়ত ক্রীড়াপ্রেমীরা স্পোর্টস এক্সেসোরিজের দোকানে ভিড় জমান। স্পোর্টস এক্সেসোরিজের দোকানে ক্রিকেট ব্যাট ও বল, ব্যাডমিন্টনের ব্যাট, কক, ফুটবল, জার্সি ইত্যাদি বিক্রি করা হয়। স্পোর্টস এক্সেসোরিজের দোকান বাজারে বা বাসস্ট্যান্ডের পাশে হলে বিক্রি বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে। আমার দেখা একটি স্পোর্টস এক্সেসোরিজের দোকানে দিনে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি এক্সেসোরিজ বিক্রি হতে দেখেছি। উল্লেখ্য, দোকানটি ছিল একটি সিএনজি স্টেশন ও বাজারের পাশে। 



৫. রেস্টুরেন্ট :-




রেস্টুরেন্ট একটি লাভজনক ব্যবসায়। রেস্টুরেন্টে সাধারণত বিভিন্ন খাবার পরিবেশন ও বিক্রি করা হয়। রেস্টুরেন্টে সাধারণত একজন বা একাধিক কারিগর থাকেন যারা খাবার প্রস্তুত করে থাকেন। আর পরিচারকগণ খাবার পরিবেশন করে থাকেন। সাধারণত,  বাজারের ভেতরে বা বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত রেস্টুরেন্টে বিক্রি ভালো হয়। আপনি যদি রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করার চিন্তা করেন তাহলে মানসম্পন্ন খাবার প্রস্তুতের দিকে আপনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসাথে আপনাকে বুঝতে হবে ক্রেতাদের চাহিদা সম্পর্কে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলো প্রতি মাসে লাখ-লাখ টাকা আয় করে থাকে। এখানে একটি কথা বলে রাখি, ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য অনেক রেস্টুরেন্ট ভালো সাজসজ্জা করে থাকে। অনেক ক্রেতারাই এ ধরণের রেস্টুরেন্ট বেশী পছন্দ করে থাকেন।




৬. মোবাইল মেরামত :-




আমাদের সবারই হাতে হাতে মোবাইল ফোন। এই মোবাইল নিশ্চই নষ্ট হয়। যেহেতু, এটি একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস তাই নষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর মোবাইল নষ্ট হয়ে গেলে মেকানিকের কাছে নিয়ে যেতে হয়। মেকানিক টাকার বিনিময়ে মোবাইল রিপেয়ার  করে দেয়। আপনিও যদি এরকম মোবাইল রিপেয়ারের ব্যবসা করতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে কাজ শিখতে হবে। কিন্তু কিভাবে শিখবেন? মোবাইল রিপেয়ারের কাজ শিখার জন্য কোর্স করতে হয়। অথবা অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে শিখতে পারেন। আজকাল ইউটিউবে মোবাইল সার্ভিসিং বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও টিউটোরিয়াল পাওয়া যায় যা দেখেও আপনি শিখতে পারেন। কাজ শিখা হয়ে গেলে আপনি নিজেই একটি দোকান নিয়ে বসতে পারেন। মনে রাখবেন এটি একটি টেকনিক্যাল কাজ। টেকনিক্যাল কাজ কখনো বিফলে যায় না। আপনারা হয়তো জানেন যে, বাংলাদেশ সরকার মোবাইল আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে অনেক মোবাইল ব্র‍্যান্ড এখন বাংলাদেশেই ফোন উৎপাদন করার জন্য কারখানা স্থাপন করেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্যামসাং, ওয়ালটন, সিম্ফনি, অপো, ভিভো, রিয়েলমি ইত্যাদি। এসব ফোন কারখানাতে কাজ করা অধিকাংশ শ্রমিকই আগে মোবাইল রিপেয়ারিংয়ের কাজ করতেন।




৭. ফাস্ট ফুডের দোকান:-




ফাস্ট ফুডের দোকান লাভজনক একটি ব্যবসা। স্কুল-কলেজ বা বাসস্ট্যান্ডের সামনে অবস্থিত ফাস্ট ফুডের দোকানে বিক্রির সম্ভাবনা বেশি। বিশেষ করে কলেজের ছাত্রদের ফাস্ট ফুডের দোকানে বেশি ভিড় জমাতে দেখা যায়। ফাস্ট ফুডের যেসব খাবার বিক্রি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ফুচকা, সমুচা, চা-কফি, কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি। অধিকাংশ ফাস্ট ফুডের দোকানে ভালো বিক্রি থাকে।



৮. লাইব্রেরী ও ষ্টেশনারী :-




লাইব্রেরি ও ষ্টেশনারী অন্যতম লাভজনক ব্যবসায়। ছাত্রজীবণে বই-খাতা, কলম-পেন্সিল ও অন্যান্য শিক্ষাসহায়ক সামগ্রী অপরিহার্য অংশ। এসব শিক্ষাসামগ্রী কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরি ও ষ্টেশনারীতে যেতে হয়। ব্যস্ততম বাজারে লাইব্রেরির ব্যবসায় ভালো হয়। লাইব্রেরি ও ষ্টেশনারীর দোকানে সব ক্লাসের সব ধরণের বই ও শিক্ষাসামগ্রী রাখতে হয়।



আমার শেষ কথা:-

কোন ধরণের ব্যবসা কম পুঁজি লাভজনক তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কেননা, বিক্রি ভালো হলে যেকোনো ব্যবসায় লাভজনক। আগেই বলেছি, এটি নির্ভর করে সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের উপর। কিছু কিছু ব্যবসায়ে পুঁজি বেশি লাগে (যেমন:- মোবাইলের দোকান)। আবার, কিছু ব্যবসায়ে পুঁজি কম লাগে (যেমন- মোবাইল রিপেয়ারিং)। এসব থেকে আপনার পছন্দমত যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। 



আশাকরি, পোস্টটি আপনাদের উপকারে এসেছে। আপনাদের মতামত কমেন্টে জানাতে পারেন।





🔹ধন্যবাদ 🔹

Post a Comment

Previous Post Next Post